নতুন প্রজন্মের মাঝে মাতৃভাষার চর্চা ,ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং মাতৃভাষার ওপর গুরুত্বারোপ করে কানাডার ক্যালগেরিতে ‘প্রবাসে একুশের চেতনা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভার আয়োজন করে দেশটির আলবার্টা প্রভিন্সের প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল প্রবাস বাংলা ভয়েস।
পোর্টালটির প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুলের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মোহাম্মদ রশিদ রিপন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্যালগেরির এ বি এম কলেজের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল বাতেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ভাষার দাবির মধ্যেই নিহিত ছিল গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক-স্বাধিকার জাতিসত্তা সম্পর্কে চেতনার উন্মেষ এবং জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের বীজ।
বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মো. রশিদ রিপন বলেন, যেকোনো জাতির জন্য প্রথম যে জিনিসটি দরকার তা হলো তার মায়ের ভাষা। যার মাধ্যমে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি। আর সেই লক্ষ্যে প্রবাসে মাতৃভাষার চর্চা বাড়াতে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।
মোহাম্মদ আবদুল বাতেন বলেন, একুশ সব অন্যায়-অবিচার আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ন্যায্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একুশের পথ ধরেই আমরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। একুশের চেতনা, ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা এখনও ফুরিয়ে যায়নি। প্রবাসে আমাদের মাতৃভাষার চর্চাকে অব্যাহত রাখতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড জিও সাইন্টিস্ট অব আলবার্টার ক্যালগেরি শাখার কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ভ্রান্ত দ্বিজাতিতত্ত্ব বা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিস্ফোরিত হয় এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই। বাংলাদেশের সকল আন্দোলনের মূলে ছিল এই ভাষা আন্দোলন।
বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি আবদুল্লা রফিক বলেন, একুশের চেতনা অবিনশ্বর, যা আমাদের বাঙালি জাতিসত্ত্বার অবিচ্ছেদ্য অংশ। যা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার অনুপ্রেরণা। প্রবাসেও পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে আমাদের মাতৃভাষার চর্চা বাড়াতে হবে। শুরু করতে হবে নিজের পরিবার থেকে এবং অন্য সংস্কৃতিতেও ছড়িয়ে দিতে হবে।
সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি রূপক দত্ত বলেন, ভাষার প্রশ্নে একুশের আন্দোলন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তা ছিল চেতনার বিরুদ্ধে প্রথম সম্মিলিত প্রতিবাদ। মাতৃভাষার বিরুদ্ধে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর আচরণ বাঙালি জাতি কোনোদিনও ক্ষমা করবে না।
সাবেক ছাত্রনেতা, ট্রাস্টি ও বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাবেক সভাপতি কিরণ বণিক শংকর বলেন, একুশ মানে চাপিয়ে দেয়া সকল বিষয়ে সর্বদা প্রতিবাদ করা। মহান ভাষা আন্দোলনের যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি আজ এতটুকু এগিয়ে এসেছে তা বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
স্বাগত মো. মাহমুদ হাসান বলেন, প্রবাসে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যদি বাংলাভাষা আর বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে একদিন প্রিয় বাংলাদেশের সাথে তাদের সেতুবন্ধনটি হারিয়ে যাবে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তিনি ক্যালগেরিতে একটি শহীদ মিনার নির্মাণসহ বাংলা স্কুলকে আরও বেশি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে একটি আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার দাবীতে উপস্থিত সুধীজনদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
আলবার্টা বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি প্রকৌশলী সুব্রত বৈরাগী বলেন, ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার এবং পরবর্তী যুগের রাজপথ করে দেয় যা ইতিহাসের পাতায় পাতায় উদ্ভাবিত হয়েছে।